ডিভোর্স এবং সন্তান

অনেক স্বপ্ন এবং আশা নিয়ে যে সম্পর্কের শুরু নানা কারণে সেই সম্পর্কের সুর বদলায়, ভাঙন ধরে। মা-বাবার সম্পর্কের টানাপড়েনে সবচেয়ে বেশি আঘাত লাগে কোমল শিশুমনে! নতুন জীবনে মানিয়ে নিতে সন্তানের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে আপনাকেই। ডিভোর্সের ঝামেলা কাটিয়ে ওঠার জন্য জরুরি পরামর্শ। এ বিষয়ে লিখেছেন_ খুরশীদা রহমান চৈতী

বাচ্চার সামনে সিনক্রিয়েট করবেন না। কথা কাটাকাটির সময়ই কটূক্তি বা একে অপরকে অনর্থক দোষারোপ করলে সন্তানের কাছে নিচু হয়ে যাবেন। বিচ্ছেদের জন্য তাহলে ও আপনাকেই দোষী সাব্যস্ত করবে। ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সন্তানের সঙ্গে একান্তে আলোচনায় বসুন। সহজ ভাষায় কাউকে দোষ না দিয়ে আপনাদের মতানৈক্য এবং আলাদা থাকার সিদ্ধান্তের কথা ওকে জানান। সঙ্গে সঙ্গে এও জানাতে ভুলবেন না যে, আপনাদের সম্পর্কে চিড় ধরলেও ওর প্রতি ভালোবাসায় কোনো ঘাটতি নেই। বাবা-মায়ের সঙ্গে ছেলেমেয়ের যে কখনো ডিভোর্স হতে পারে না, সেটা ওর মনে গেঁথে দিন।

বাচ্চার কাস্টডি নিয়ে আলোচনা, আইনি মারপ্যাঁচ থেকে ওকে আড়াল করুন। আদালত বাচ্চার মতামত জানতে চাইলে ও যাতে নির্ভয়ে মনের কথা খুলে বলতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখুন।

অনেক সময় নিজেকে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের কারণ ধরে নিয়ে বাচ্চারা অপরাধবোধে ভোগে। কোনো অসতর্ক মুহূর্তেও ডিভোর্সের সঙ্গে বাচ্চাকে জড়াবেন না। ওর সামনে নিজেদের দাম্পত্য জীবনের ব্যর্থতা, স্বামীর চরিত্র, শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের সমালোচনা করবেন না। ও যদি এ ব্যাপারে প্রশ্ন তোলে, তাহলে বনিবনার অভাব, মতের পার্থক্যের দিকটা যতটা সম্ভব যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করুন।

বিচ্ছেদের পর বাচ্চার সঙ্গে আপনার সম্পর্কটা যাতে আরও নিবিড় হয়ে ওঠে, সেদিকে নজর দিন। এতে আপনার মনের কষ্টও অনেকটা লাঘব হবে। এই সময়ে অনেকেই বাড়ি শিফট করেন, নতুন পরিবেশে, নতুন মানুষজনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা বাচ্চার পক্ষে খুবই কঠিন হতে পারে। সে জন্য পদে পদে আপনার সাহায্য প্রয়োজন। ওর জেদ, কান্নাকাটি, অভিমান_ সবই ধৈর্য ধরে ট্যাকল করতে হবে এই সময়। বাচ্চার স্কুলের টিচার বা অন্য ভালোবাসার মানুষজনের কাছ থেকে সাহায্য নিন। সম্ভব হলে একে নিয়ে কিছুদিনের জন্য কাছে পিঠে ঘুরে আসুন।

যদি বাচ্চা আপনার সঙ্গে নাও থাকে, তাহলেও প্রতিদিন অন্তত একবার ফোন করে ওর সঙ্গে কথা বলুন। উইক অ্যান্ডে বা ভ্যাকেশনে দু’জনে একসঙ্গে সময় কাটান। নিজের সময়ের অভাবটা কখনোই গিফট দিয়ে পূরণ করতে চেষ্টা করবেন না। বাচ্চারা খুব সহজেই আপনার এই দুর্বলতার জায়গা বুঝে ফেলবে। জন্মদিন বা উৎসবে উপহার অবশ্যই দেবেন, তবে নিজের সাধ্যের মধ্যে। স্কুলের প্যারেন্ট-টিচার মিটিং, টিউটরদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা বা হবি ক্লাসের খোঁজখবর নিলেও বাচ্চার মনের কাছাকাছি পৌঁছতে পারবেন।

আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং কলিগদের নিয়ে একটা ফ্রেন্ডশিপ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন। শ্বশুরবাড়ির পক্ষের ভালোবাসার মানুষজনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন না। প্রত্যেকের সঙ্গে শিশুকে খোলা মনে মিশতে দিন। বাড়িতে মাঝে মাঝে দু’একজনকে নিমন্ত্রণ করুন। ছুটির দিনে বাচ্চাকে নিয়েও ওদের বাড়ি যান। সবার কাছ থেকে ভালোবাসা এবং সাপোর্ট পেলে ও কখনো ইনসিকিওরবোধ করবে না। সপ্তাহের একটা দিন কয়েক ঘণ্টা দু’জনে কাটান। দু’জনে মিলে একটি শক্ত রান্না আয়ত্তে আনুন, রাস্তার পশুপাখিদের খেতে দিন বা নতুন একটা গেম খেলুন। মাঝে মাঝে বাচ্চার ৩-৪ জন বন্ধুকে ডেকে নিয়ে ছোট্ট পার্টিও অ্যারেঞ্জ করতে পারেন। পার্টির প্রস্তুতির দায়িত্ব সমানভাবে ওকেও দিন। স্যান্ডউইচ বানানো, মিল্ক শেক তৈরি করা, গেমস ঠিক করার মতো ইন্টারেস্টিং কাজগুলো ওকেই করতে দিন। হয়তো অজস্র ভুল হবে কিন্তু এভাবেই ও ধীরে ধীরে রেসপনসিবল হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত

Published by Bangladeshi Matrimonial Service

Bibahabd.com, is an international matrimonial web Portal aimed at fulfilling the needs of Bangladeshis both at home and abroad. It is designed to provide its members a secured and private environment to find their ultimate life partners by providing them a trusted source of genuine people trying to find their soul mates. The platform bibahabd.com allows members to search, communicate, interact and finally find the right person for them or their loved ones.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান